মো. নয়ন শেখ,স্টাফ রিপোর্টার:
একদিন পরই পহেলা বৈশাখ। নতুন বছরকে বরণ করতে দেশের নানা প্রান্তে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। আর বৈশাখী মেলা মানেই রঙিন খেলনা, মুখোশ, আর মাটির তৈরি হাড়ি-পাতিলের ছড়াছড়ি। তাই তো নড়াইল জেলার পালপাড়াগুলোতে এখন দিনরাত এক করে চলছে মাটির শিল্পের প্রস্তুতি।
লোহাগড়ার কুন্দসী পালপাড়ায় ভোর ৫টা থেকে চাকা ঘুরিয়ে কলসী, হাঁড়ি, ঢাকনা তৈরি করছেন কারিগর প্রভাষ পাল। পাশে স্ত্রী লক্ষ্মীরানী পালও ব্যস্ত রঙতুলির কাজে। রীতিমতো শিল্পীর নিপুণ হাতে মাটি যেন প্রাণ পাচ্ছে।
প্রভাষ পাল বলেন, “বৈশাখ মাসে ধর্মীয় রীতিতে চাকা বন্ধ রাখতে হয়। তাই এখন রাতদিন কাজ করছি। চাহিদা বেশি, সময় কম।”
শুধু কুন্দসী নয়, জেলার রাধানগর, কুমোরডাঙ্গা, দলজিতপুর, রতডাঙ্গা, রায়গ্রাম ও মুলিয়াসহ শতাধিক এলাকায় কুমোরদের ঘরে এখন উৎসবমুখর ব্যস্ততা। কেউ চাকা ঘুরিয়ে বানাচ্ছেন তৈজসপত্র, কেউ আবার ছাঁচে তৈরি করছেন ঘোড়া-হাতি, ব্যাংক, মাটির পুতুল, কিংবা বৈশাখী মুখোশ।
এই কাজে নেই বয়সের সীমা। বুড়ো থেকে শিশু—সবাই হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করছেন বৈশাখী উৎসবকে প্রাণবন্ত করে তুলতে। মাটির গন্ধ মেখে গড়ে উঠছে বাংলার হাজার বছরের ঐতিহ্য।
চলতি মাসের নানা বৈশাখী মেলায় বিক্রির জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে এসব পণ্য। নড়াইল শহর, লোহাগড়া, কালিয়া ও আশপাশের গ্রামীণ বাজারে বসবে বৈশাখী মেলা, যেখানে মৃৎশিল্পীদের এসব পণ্য থাকবে আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু।
আশার বানী শুনিয়ে নড়াইল ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প কর্পোরেশনের (বিসিক) উপপরিচালক প্রকৌশলী সোলায়মান হোসেন বলেন, “আমরা তাদের উন্নতমানের প্রশিক্ষণ দিতে পারি, ঋণ সহায়তা দেওয়ার মাধ্যমে মৃৎশিল্পীদের টিকিয়ে রাখতে পারি।”
হারিয়ে যেতে বসা মৃৎশিল্পকে টিকিয়ে রেখে বাঙালি সংস্কৃতি বাঁচিয়ে রাখলেই উৎসব হবে আরও রঙিন ও প্রাণবন্ত—এমনটাই প্রত্যাশা সবার।