স্টাফ রিপোর্টার:
নড়াইলের কালিয়া উপজেলার নড়াগাতী থানাধীন চর জয়নগর গ্রামে সৌদি প্রবাসী আকরাম শেখ (৪৩) হত্যাকাণ্ডের জেরে প্রতিপক্ষের ভয়াবহ হামলায় পুরো গ্রাম যেন মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে। ২১টি বাড়িতে ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে দুর্বৃত্তরা প্রায় ১০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। অব্যাহত হামলা ও নিরাপত্তাহীনতার আশঙ্কায় গ্রামটি এখন পুরুষশূন্য। আতঙ্ক আর শঙ্কায় মানবেতর জীবন যাপন করছেন সেখানকার নারী ও শিশুরা।
বুধবার (১৬ এপ্রিল) সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, মধুমতী নদীর তীর ঘেঁষে অবস্থিত চর জয়নগর গ্রামটি সৌদি প্রবাসীদের একটি সমৃদ্ধ জনপদ ছিল। অধিকাংশ বাড়িঘরই পাকা ও দৃষ্টিনন্দন বিল্ডিং। কিন্তু আজ সেসব বিল্ডিং পরিণত হয়েছে ধ্বংসস্তূপে। কোথাও আগুনে পোড়া দেয়াল, কোথাও ধসে পড়া ছাদ, আবার কোথাও কেবল ইট-বালুর স্তূপ। যেন কোনো দানবীয় তাণ্ডব চলেছে সম্প্রতি। গ্রামের অলিগলিতে হাহাকার আর শুনশান নীরবতা, লোকজনের দেখা মেলেনি কোনো বাড়িতে।
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, পূর্ব বিরোধ ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে গত ১২ মার্চ ইফতারের পর গ্রামের একটি দোকানে চা খেতে গেলে প্রতিপক্ষের লোকজন আকরাম শেখের ওপর বর্বরোচিত হামলা চালায়। দেশীয় অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে ও পিটিয়ে গুরুতর আহত করে তাকে। গোপালগঞ্জ হাসপাতালে নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।
আকরাম শেখ হত্যার পর পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নেয়। তার ভাই ইকরাম শেখের নেতৃত্বে ৫০-৬০ জনের একটি দল প্রতিপক্ষের আনসার জমাদ্দার, ইসমাইল জমাদ্দার, ফহম সিকদার, সৈয়দ শেখ, ইমরান শেখ, মাফুল শেখসহ অন্তত ২০টি বাড়িতে ভয়াবহ হামলা চালায়। লুটপাটের পর অগ্নিসংযোগ করা হয় অধিকাংশ ঘরে।
ঘটনার ৫ দিন পর নিহত আকরাম শেখের ভাই ইকরাম শেখ বাদী হয়ে ৪৬ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ১০-১২ জনকে আসামি করে নড়াগাতী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন (মামলা নম্বর-০৪, তারিখ: ১৭/০৩/২৫)। একইসাথে অগ্নিসংযোগ, লুটপাট ও ভাঙচুরের অভিযোগেও পৃথক মামলা দায়ের করা হয়।
ক্ষতিগ্রস্ত ইসমাইল জমাদ্দার, পারভীন বেগম, রুহি বেগমসহ অনেকেই চোখের জল মুছতে মুছতে বলেন, “আমরা নিরীহ মানুষ। কিন্তু প্রতিপক্ষ আমাদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিয়ে সর্বস্ব কেড়ে নিয়েছে। এখন পরিবার নিয়ে গ্রাম ছেড়ে পালাতে বাধ্য হচ্ছি। জীবনের নিরাপত্তা চাই, ন্যায়বিচার চাই।”
এ বিষয়ে নড়াগাতী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. শরিফুল ইসলাম জানান, আকরাম শেখ হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত দুই আসামি আনসার জমাদ্দার ও বকুল শেখকে গ্রেফতার করে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। বাকি আসামিদের গ্রেফতারের জন্য অভিযান চলছে। এছাড়া ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের মামলাতেও পৃথকভাবে গ্রেফতার কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।
ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাবাসী অবিলম্বে সেনাবাহিনীর সহায়তা চেয়ে নিরাপদে বাড়ি ফিরে যাওয়ার পরিবেশ নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছে।